ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সরকার সংস্কার কমিশন করলেও নদীর ক্ষেত্রে প্রতিফলন নেই-আনু মুহাম্মদ বাড্ডায় কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষে নিহত ১ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল খরচেও কমানো যাচ্ছে না নানামুখী আতঙ্ক রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা সেই শিশু আছিয়া না ফেরার দেশে ধর্ষণে আতঙ্ক -উদ্বেগ ভারতকে অযাচিত বিভ্রান্তিকর মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বলল ঢাকা প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে যাচ্ছেন ২৬ মার্চ সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন

২২ গ্যাস চক্র বছরে লুটে নিচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা

  • আপলোড সময় : ১৭-১২-২০২৪ ১০:২০:০০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৭-১২-২০২৪ ১০:২০:০০ অপরাহ্ন
২২ গ্যাস চক্র বছরে লুটে নিচ্ছে ২ হাজার কোটি টাকা
২২ গ্যাস আমদানিকারক চক্রটি বছরের পর বছর হাজার-হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। রেফ্রিজারেন্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সর্বাধিক ব্যবহৃত এই গ্যাস সংক্রান্ত ব্যবসায় জড়িত না হয়েও একেকজন তিন-চারটা লাইসেন্স গ্রহণ করেছে। আমদানিকৃত গ্যাস পরিকল্পিতভাবে মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে এই চক্র। তিন-চার গুণ বেশি মূল্যে বিক্রি করা হয় এসব গ্যাস। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার। ওই নীতিমালা অনুসারে নির্দিষ্ট ৫১টি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। সুবিধাবাদী কিছু অসৎ ব্যবসায়ী গত স্বৈরাচার সরকারের আশ্রয়-প্রশয়ে প্রভাব খাটিয়ে ওই নীতিমালা প্রণয়নে ভূমিকা রাখে। তারা একেকজনের নামে একাধিক লাইসেন্স নেয়া হয়। এরমধ্যে রয়েছেন আরিফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। এই একই ব্যক্তির দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে দু’টি লাইসেন্স রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এরকম এক ব্যক্তির একাধিক লাইসেন্স রয়েছে।
অতি মুনাফাই শুধু নয় বোতলের রং ও গ্যাসের নম্বর পরিবর্তন করে বাজারজাত করার অভিযোগ রয়েছে চক্রটির বিরুদ্ধে। দামি কোম্পানির অদাহ্য গ্যাসের সিলিন্ডারে ভরে দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের দাহ্য গ্যাস। এতে মেরামতের সময় গ্যাসের ধরন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। বিখ্যাত কোম্পানির নামের সঙ্গে মিল রেখে চীন থেকে এই চক্রটি আমদানি করে নকল গ্যাস। এসব কারণেই ঘটছে এসি বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা। জানা গেছে, নিম্নমানের আর-৪০৭ গ্যাস প্রতিটি আমদানিতে খরচ হয় মাত্র তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা। পরবর্তীতে এই চক্র তা বাজারে বিক্রি করছে ১০-১১ হাজার টাকায়। বাজারে সবচেয়ে চাহিদা আর-২২ গ্যাসের। আর আরকেমা ফরেন ফ্রান্স ব্রান্ডের এই গ্যাসের দাম রাখা হয় ২৪-২৬ হাজার টাকা। অনেক ক্ষেত্রে বোতলের রং পরিবর্তন করে আর-৪০৭ গ্যাস বিক্রি করা হয় আর-২২ বলে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ রিফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং মার্চেন্টস এসোসিয়েশন (ব্রামা) মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিতে সহযোগিতা করেছে। অভিযোগ রয়েছে, নকল কম্প্রেসার আমদানি এবং আমদানি করা গ্যাস নিয়ে কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের নানাভাবে সমর্থন-সহযোগিতা করেন ব্রামার সভাপতি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। গত ১৫ বছর ধরেই তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিলেন। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদপুর থানার সহ-সভাপতি তিনি। এছাড়াও ব্রামার অন্যান্য নেতৃবৃন্দও গত সরকারের আর্শীবাদপুষ্ট থাকায় তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাননি বলে ব্যবসায়ীরা জানান। গত ১৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিতভাবে নীতিমালা সংস্কারের আবেদন করেছে বাংলাদেশ আরএসি মালিক কল্যাণ এসোসিয়েশন (বিআরএসি)। এতে গ্যাসের আমদানি ও বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বৈষম্য, অসঙ্গতি উল্লেখ করা হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৫১ জন লাইসেন্সধারী বাজারে আর-২২ গ্যাসের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজার থেকে প্রতি বছর ২ হাজার ১শ’ ৪৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চক্রটি আস্বাভাবিকভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা ৪০ (অসাধু মুনাফা) এবং ৪৫ (প্রতারণা) লঙ্ঘন করেছে। আর-২২ গ্যাসের সিলিন্ডারের আমদানি মূল্য ৭ হাজার ৫০ টাকা হলেও গড় বাজার মূল্য ২৫ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। সিন্ডিকেটের এসব লাইসেন্স বাতিল করে সঠিক পন্থায় নতুন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদানের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর-২২ গ্যাস ওজোন স্তরের জন্য ক্ষতিকর হলেও বিকল্প গ্যাস ব্যবহারে মেশিনের স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ধারা ৬ (পরিবেশগত ছাড়পত্র) এবং ধারা ৭ (নিয়ন্ত্রণ) অনুসারে পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আর-২২ গ্যাসের বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এই আইনের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী বলে বিআরএসি নেতৃবৃন্দ মনে করেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়ে তারা আবেদনে উল্লেখ করেছেন, যেসব ব্যবসায়ীর একাধিক লাইসেন্স রয়েছে, তাদের অতিরিক্ত লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যোগ্য ও সৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন লাইসেন্স বিতরণ করে বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে আর-২২ গ্যাসের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণে একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো চালুর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। বাজারে কৃত্রিম সংকট এবং অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি রোধে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা কার্যকর করারও অনুরোধ করেন। ৫১টি লাইসেন্সধারীর কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং আর-২২ গ্যাসের লাইসেন্স ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে লিখিত আবেদনে অনুরোধ জানান বিআরএসি নেতৃবৃন্দ।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স